স্বাধীন কন্ঠ ডেস্ক
যশোরের বাহাদুরপুর গ্রামে এক পুলিশ কনস্টেবলের বাড়িতে শিশু সন্তানকে নিয়ে অনশন করেছেন এক গৃহবধূ। টাঙ্গাইল থেকে এসে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বাহাদুরপুর গ্রামের রফিক উদ্দিনের ছেলে সাদমান হোসেন রাকিবের বাড়িতে অনশন শুরু করেন শারমিন আক্তার (ছদ্মনাম) নামের ওই নারী। শারমিনকে দেখেই সাদমানের মা বাড়িতে তালা দিয়ে অন্যত্র চলে যান। এ সময় শারমিন আমরণ অনশনের ঘোষণা দেন।
খবর পেয়ে স্থানীয়রা ছুটে আসেন এবং সাদমানের শাশুড়িকে ডেকে আনেন। দুই পক্ষের সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনার পর এবং বিভিন্ন আশ্বাসের ভিত্তিতে বিকেলে শারমিনকে বাড়িতে ফেরত পাঠানো হয়। এই ঘটনায় বাহাদুরপুর এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। শারমিন অভিযোগ করেন, অনশনের সময় তার ও তার শিশু সন্তানের সঙ্গে খারাপ আচরণ করা হয়েছে।
শারমিনের দাবি, ২০১৭ সালে বেকার থাকা অবস্থায় বাহাদুরপুর গ্রামের সাদমান হোসেন রাকিবের সঙ্গে তার ফেসবুকে পরিচয় হয়। পরে সাদমান খুলনা আরআরএফ-এ কনস্টেবল পদে চাকরি পান। ২০২২ সালে তারা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। বিয়ের সময় শারমিনের পরিবার সাদমানকে সোনা ও ঘরের আসবাবসহ ছয় লাখ টাকার মালামাল দেন।
চাকরি পাওয়ার পর সাদমান শারমিনকে নিয়ে কুষ্টিয়া ও পরে চুয়াডাঙ্গা জেলায় বদলি হলে সেখানেও বাসা ভাড়া করে বসবাস করেন। শারমিনের গর্ভে সন্তান আসার পর অসুস্থতার কারণে তিনি টাঙ্গাইলের উফুলকি গ্রামে বাবার বাড়িতে চলে যান। সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা থাকাকালীন তিনি জানতে পারেন, সাদমানের আরেকজন স্ত্রী রয়েছে, যা তিনি শারমিনের কাছে গোপন রেখেছিলেন। এ নিয়ে তাদের মধ্যে মনোমালিন্য তৈরি হয় এবং পরে তাদের ছেলে সন্তানের জন্ম হয়।
এরমধ্যেই সাদমান শারমিনের কাছে পাঁচ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করেন। যৌতুকের টাকা না দেওয়ায় সাদমান তার ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন শুরু করেন। টাকা না পাওয়ায় একপর্যায়ে তিনি শারমিনের সঙ্গে সব ধরনের যোগাযোগ বন্ধ করে দেন। চলতি বছরের ১৭ এপ্রিল সাদমান টাঙ্গাইলে গিয়ে স্পষ্ট জানান যে, পাঁচ লাখ টাকা যৌতুক ছাড়া শারমিন ও তার সন্তানকে তিনি ঘরে তুলবেন না।
এরপর থেকেই শারমিন বিচার ও আশ্রয়ের খোঁজে দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। এ ঘটনায় তিনি টাঙ্গাইলের আদালতে মামলা করেছেন। কিন্তু স্বামী পুলিশ সদস্য হওয়ায় তিনি কোনো প্রতিকার পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করেন। তিনি সব প্রমাণপত্র নিয়ে খুলনা ডিআইজির কাছেও অভিযোগ জানিয়েছেন। ডিআইজি বিষয়টি তদন্তের নির্দেশ দিলেও পুলিশ এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। উল্টো মামলা ও অভিযোগ করায় সাদমান বিভিন্নভাবে তাকে হুমকি দিচ্ছেন বলে তিনি জানান।
শারমিনের পরিবারও তাদের ভরণপোষণ চালাতে হিমশিম খাচ্ছে। বাধ্য হয়েই তিনি তার শিশু সন্তানকে নিয়ে বৃহস্পতিবার শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে অনশনে বসেন। সকালে শারমিনের অবস্থান জানতে পেরে স্থানীয়রা হতবাক হন এবং তারা সাদমানের পরিবারের সঙ্গে কথা বলার আশ্বাস দেন। পরে বিকেলে শিশু সন্তানকে নিয়ে শারমিন গ্রাম ত্যাগ করেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত পুলিশ কনস্টেবল সাদমান হাসান জানান, শারমিন তার স্ত্রী ছিলেন, কিন্তু তিন মাস আগে তাকে তালাক দেওয়া হয়েছে। তবে তিনি শিশুটিকে নিজের সন্তান বলে স্বীকার করেন।
তিনি আরও বলেন, শারমিন আদালতে মামলা করেছেন এবং খুলনা রেঞ্জ অফিসে অভিযোগ করেছেন। তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত শুরু হয়েছে। আদালতের মাধ্যমে বিষয়টি মীমাংসা হবে উল্লেখ করে সাদমান দৃঢ়ভাবে মন্তব্য করেন যে, তিনি শারমিনকে আর ঘরে তুলবেন না।




