স্বাধীন কন্ঠ ডেস্ক
বসতভিটা দখলের চেষ্টা, হামলা, লুটপাট ও পেট্রোল ঢেলে পুড়িয়ে মারার হুমকির অভিযোগ এনে যশোর প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেছেন যশোর সদর উপজেলার মুড়ুলী পুকুরকুল এলাকার ফারজানা ইয়াসমিন তনু। বুধবার দুপুরে প্রেসক্লাব যশোর হলরুমে তিনি লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন।
সংবাদ সম্মেলনে ফারজানা ইয়াসমিন তনু অভিযোগ করেন, তার বসতভিটাটি মুরোলীর মূল রাস্তার পাশে হওয়ায় দীর্ঘ আট বছর ধরে স্থানীয় একটি চক্র তাদের ওপর বিভিন্নভাবে হয়রানি ও হামলা চালাচ্ছে।
লিখিত বক্তব্যে ফারজানা ইয়াসমিন তনু জানান, গত ৩০ নভেম্বর, রোজ রবিবার, তিনি তার অসুস্থ মাকে দেখতে স্বামী অনুমতি সাপেক্ষে ছেলে রাফসান রাহিম (৬) কে নিয়ে বাবার বাড়িতে আসেন। সেদিন বিকেলে তার ছেলে সাইকেল নিয়ে খেলা করছিল। তখন পার্শ্ববর্তী বাড়ির নাজিমের ছেলে তানভির (১৭) সহ বেশ কয়েকজন তার সন্তানের কাছ থেকে সাইকেল নেওয়ার সময় ধস্তাধস্তি করে। একপর্যায়ে তার ছেলে রাফসান রাহিম অচেতন অবস্থায় মাটিতে পড়ে যায়।
তিনি বলেন, আমরা ওদেরকে কিছু জিজ্ঞাসা করার আগেই পূর্ব শত্রুতার জেরে আমাদের ওপর চড়াও হয়ে হামলা করে। স্থানীয় লোকজন আমাদের উদ্ধার করে বাড়িতে পাঠিয়ে দেন।
তনু অভিযোগ করেন, প্রথম হামলার পর তারা হাসপাতালে যাওয়ার আগেই হামলাকারীরা কোতোয়ালী থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করে আসে। এরপর ভেজাল মবিল তৈরির কারখানার মালিক আলি হোসেনের নেতৃত্বে প্রায় ৩০ থেকে ৪০ জন অজ্ঞাতনামা ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী দ্বিতীয়বার তাদের বাড়িতে এসে হামলা চালায়।
তিনি জানান, হামলাকারীরা তাদের চুলের মুঠি ধরে বাড়িতে অবরুদ্ধ করে রাখে, ঘরের মূল্যবান জিনিসপত্র লুট করে নেয়। লুট হওয়া মালামালের মধ্যে ছিল ১ ভরি স্বর্ণ, অলংকার, নগদ ৫ লক্ষ টাকা এবং অগ্রণী ব্যাংকের চেকবই।
হামলাকারীরা ভাঙচুর ও মারধর করার পাশাপাশি তাদের জীবনের চরম হুমকি দেয় বলে তনু জানান। তিনি বলেন, তারা পানির বোতলে থাকা দাহ্য পদার্থ পেট্রোল আমাদের সকলের গায়ে ঢেলে দিয়ে দেশলাই ধরিয়ে পুড়িয়ে মারার হুমকি প্রদান করে। প্রাণের ভয়ে আমরা গুরুতর আহত শরীর নিয়ে ঘরের মধ্যে নিস্তেজ হয়ে পড়ে থাকি। এরপরও শব্দ করলে গলায় দেশীয় অস্ত্র ঠেকিয়ে পুনরায় প্রাণনাশের হুমকি দেয় এবং প্রশাসনকে জানালে পেট্রোল দিয়ে পুড়িয়ে মারার হুমকি দেয়।
একদিকে তাদের অবরুদ্ধ করে রেখে, অন্যদিকে হামলাকারীরা থানায় মিথ্যা মামলা দায়ের করে আসে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ঘটনার পর চার দিন ধরে পরিবারসহ তারা রাস্তায় অবস্থান করছেন। সন্ত্রাসী বাহিনীর বাধায় থানায় যেতে পারছিলেন না। অবশেষে গত সোমবার (০২ ডিসেম্বর) অনেক চেষ্টার পর তারা যশোর কোতোয়ালী থানায় অভিযোগ দায়ের করেন এবং ওসির সাথে কথা বলেন। ওসি তাদের শরীরের ক্ষতবিক্ষত আঘাতের চিহ্ন দেখে একজন এসআইকে মামলা রেকর্ড করার নির্দেশ দেন। বর্তমানে আইনি প্রক্রিয়া চলছে। তবে বাড়ি ফিরে তারা জানতে পারেন, হামলাকারীরা তাদের ওপর বিভিন্নভাবে মিথ্যা অপবাদ ছড়াচ্ছে এবং পুনরায় হামলার পরিকল্পনা করছে।
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালেও একই চক্রের হামলায় ফারজানা ইয়াসমিন তনুর পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা বোনের পেটে আঘাত লাগলে গর্ভের সন্তান নষ্ট হয়ে যায়। এ ঘটনায় তখন মামলা দায়ের করা হয়েছিল।
অসহায় অবস্থায় পরিবারসহ চরম বিপদে পড়ে ফারজানা ইয়াসমিন তনু সমাজের দর্পণ ও অসহায়দের ভরসা হিসেবে সাংবাদিকদের পাশে থাকার জন্য আকুল আবেদন জানান।
সংবাদ সম্মেলনে ফারজানা ইয়াসমিন তনুর সাথে উপস্থিত ছিলেন তার ছেলে রাফসান রাহিম এবং মা পারুল বেগম।




